1. info@jonomoth.com : admi2017 : জনমত নিউজ
  2. jonomoth24@gmail.com : Jonomoth .com : Jonomoth News .com
  3. wpsupp-user@word.com : wp-needuser : wp-needuser

হবিগঞ্জের হাওরজুড়ে তীব্র দহনেও বিশাল কর্মযজ্ঞ

এখন বৈশাখ মাস, সারাদেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। প্রচন্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া শহরের মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আবার ঘরের ভেতরে থেকেও ভ্যাপসা গরমে হাসফাঁস করছেন সবাই।

কিন্তু শহরের অবস্থা এমন হলেও গ্রামের দৃশ্য একদম উল্টো। প্রচন্ড গরমেও গ্রামের মানুষজন ঘরে থাকছেন না। শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ নারী-পুরুষ সবাই প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে বোরো ধান ঘরে তুলতে মাঠে কাজ করছেন। দিন কিংবা রাত, তাদের কাছে যেন কোন পার্থক্যই নেই।

হবিগঞ্জের সবক’টি হাওরে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরজুড়ে এখন শুধু পাকা ধানের রঙিন ঝিলিক আর মৌ মৌ ঘ্রাণ। সপ্তাহখানেক আগ থেকেই হবিগঞ্জের প্রতিটি হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে শ্রমিক সংকট থাকায় ধান কাটায় অন্য বছরের তুলনায় অনেকটা ধীরগতি বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিলো- ১ লাখ ১৫ হাজার ১শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে জেলায় আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে।

এছাড়া বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিলো- প্রতি হেক্টর জমিতে ৩.৯৫ মেট্রিকটন। কিন্তু যা অতিক্রম করে উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৪.০৫ মেট্রিকটন। সে অনুযায়ি জেলায় মোট বোরো ধান উৎপাদন লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হলেছিলো- ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭শ’ ৪ মেট্রিকটন। যা লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭শ’ ৫০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ধানের এমন ফলনে খুশি হবিগঞ্জের কৃষকরা। প্রচণ্ড তাপদায়েও কণ্ঠে ভাটিয়ালি গান ধরে ধান কাটছেন কৃষকরা। আর নারী-বৃদ্ধ, বৃদ্ধারা খলায় (ধান তুলার মাঠ) কাজ করছেন বিশ্রামহীনভাবে।

এদিকে, উঁচু জমিতে ধানকাটা সবেমাত্র শুরু হলেও নিচুঁ এলাকার প্রায় ৩০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি শ্রমিক সংকট না থাকলে ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে যেত।

সরজমিনে হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাওরেই ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক কৃষাণীরা। বৈশাখের প্রথম সময় থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করবেন। প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে পুরুষ ও যুবকরা হাওরে ধান কাটছেন। আর নারীরা খলায় (ধান শুকানোর মাঠ) বিভিন্ন কাজ করছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ধান তুলার ব্যস্ততা।

কেউ কেউ ধান শুকাচ্ছেন, কেউ মাড়াই করছেন আবার কেউ খড় শুকাতে রোদে দিচ্ছেন। গ্রামের কৃষাণ বধু থেকে শুরু করে শিশু-বৃদ্ধরাও নিজেদের সামর্থমতো ধান তুলার কাছে সহযোগিতা করছেন।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে কেউ ধান কাটতে যান। আবার যারা ধান কটতে মাঠে যান না তারা খলায় কাজ করেন। সেখাইে মুলত বৈশাখের মূল কাজ। কাটা ধান মাড়াই করা হয়। তারপর শুকাতে দিতে হয়। অনেকে আবার শুকানোর আগে সেদ্ধও করে নিচ্ছেন। আগাছা পরিস্কার করা। শুকনো ধান আবার মাঠ থেকে বাড়িতে নিতে হচ্ছে। সেই সাথে গো-খাদ্য হিসেবে খড় শুকাতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় সেগুলোকে আবার হাওরেই যতন সহকারে রাখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলার কৃষক রাজেন্দ্র দাস বলেন- ‘বৈশাখে কাজের শেষ নেই। সারা বছর যে কাজ করি তাও বৈশাখের সমান হবে না। কারণ এ মাসটি আমাদের সারা বছরের হাসি-কান্নার মাস। সারা বছর ভালো থাকার জন্য এই মাসে রোগ-গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়।’

লাখাই উপজেলার কৃষক আব্দুল আওয়াল বলেন- ‘এ বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তাই আমরা অনেক খুশি। তীব্র গরমে ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাও গায়ে (শরিরে) লাগছে না।’

একই উপজেলার কৃষানী আনোয়ারা বেগম বলেন- ‘কাজের কোন শেষ আছে ? শুধু বৈশাখ মাস না। জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত চলবে আমাদের ব্যস্ততা। এখন খাওয়া-নাওয়ারও সময় নেই স্যারৃ কথা বলব কি ?’

     এই ক্যাটাগরীর আরো খবর