রায়হান আহমেদ : চুনারুঘাটে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু ‘খেজুরের রস’। আবহমান গ্রাম-বাংলার গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুরের রস লাগাতে দেখা যায় না বললেই চলে। দেখা যায় না আগের মতো খেজুর গাছিদের ছুটাছুটিও।
গ্রাম-বাংলায় শীতকালে ঘরে ঘরে পিঠাপুলির উৎসবে সবাই মেতে উঠে। আর এ উৎসবের আমেজ জমে উঠে না খেজুরের রস ছাড়া। খেজুরের কাঁচা রস যেমন সুস্বাদু, তেমনি রসের তৈরি পায়েস, গুড় সহ বিভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ অতুলনীয়।
চুনারুঘাট উপজেলার গ্রামীণ জনপদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- অতীতে শীতের উৎসব শুরু হতো খেজুর গাছের রস দিয়ে। শীতের মৌসুম শুরু হতেই সারা বছর অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেতো। বাড়িতে বাড়িতে লেগেই থাকতো পিঠাপুলির উৎসব। পাঠানো হতো আত্মীয় স্বজনদের বাড়িও। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। নেই নতুন গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগও।
উপজেলার গুটিকয়েক গ্রামে সামান্য সংখ্যক গাছে খেজুরের রস লাগিয়েছেন গাছিরা। বেশি রস সংগ্রহ করতে না পারায় বিক্রি করেন না তারা। সংগৃহীত রস তাদের পরিবারের চাহিদা মিটলেও অন্যরা নিতে পারে না খেজুরের রসের স্বাদ।
উপজেলার শ্রীকুটা গ্রামের গাছি কুটি মিয়া বলেন, “এখনকার সময়ে আগের মতো ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেন না অনেকেই। যার ফলে খেজুরের রসের খোঁজও রাখেন না তারা। এই গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতোও আগের সেই অবস্থা নেই। অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।”
জাজিউতা গ্রামের মুরব্বি আবু মিয়া বলেন, “কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনিরা তো আর সেই দুধ-চিতই, পুলি-পায়েস খেতে পায় না। তাই যে কয়টি গাছ আছে তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করছি।”
সচেতন সমাজ মনে করেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করলে এর চাষ বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে গাছিদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা দিয়ে খেজুর রস আহরণে উৎসাহিত করা যেতে পারে। কোনোভাবেই আবহমান গ্রাম-বাংলার এ ঐতিহ্যকে হারিয়ে যেতে দেয়া উচিত না।