রায়হান আহমেদ : ভালো নেই বিদ্যুৎপৃষ্টে দু’হাত হারানো চুনারুঘাটের সেই কিশোর রুয়েল। বিদ্যুৎ এর কুটিতে তার টানতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয় সে। চিকিৎসায় অবহেলা করার কারণে হাত দু’টো কাটা গেছে, এমনটাই দাবী করছেন রুয়েলের পরিবার।
চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের আলীনগরের আব্দুর রশীদের ছেলে রুয়েল অস্টম শ্রেণির ছাত্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- আলীনগর টিলার উপর নিজ বাড়ির উঠানে শুয়ে আছে রুয়েল। প্রাণবন্ত কিশোর রুয়েল যেন এখন জীবন্ত লাশ। দুই হাত ছাড়া জীবন তার কাছে শুধুই মরুভূমি। তবুও রুয়েলের বুক ভরা স্বপ্ন, সে লেখাপড়া করে বড় হতে চায়। কারো করুণার পাত্র হতে সে চায় না। কতিপয় দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তির কারণে রুয়েলের এই করুণ পরিনতি।
রুয়েল জানায়, প্রায় তিন মাস আগে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মতিন মোল্লা তাকে নতুন বৈদ্যুতিক কুটি বসানোর হেলপারের কাজে কুমিল্লার জীবন গ্রামে নিয়ে যায়। হেলপারের কাজের বদলে তাকে কুটির উপরে উঠে তার টানতে বলে লাইনম্যান কামাল ও সুপারভাইজার আনোয়ার। এ কাজ করতে সে নাকচ করলে তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে একরকম জোরেই তার টানার কাজ করায়। তার টানতে সময় সহসাই সে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়।
রুয়েলের বোন সাফিয়া খাতুন বলেন, “আমার ভাই বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার পর ঠিকাদারের লোকজন তাকে কুমিল্লা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসার পরে তারা ঢাকা শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে নেয়। কিন্তু আমাদের পরিবারের কাউকে বিদ্যুৎপৃষ্টের বিষয়টি জানানো হয়নি। খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গেলে ঠিকাদার ও তার লোকেরা পালিয়ে যায়। পরে বিকাশের মাধ্যমে ঠিকাদার আফজাল আটাশ হাজার টাকা পাঠায় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪লাখ টাকা। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা করার পর আমার ভাই রুয়েলের জীবন বাঁচলেও ঠিকাদার সময়মতো চিকিৎসা না করানোর কারণে হাত দু’টো কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। পরবর্তীতে শায়েস্তাগঞ্জের ঠিকাদার আফজাল রুয়েলের চিকিৎসা বাবদ দুই লাখ টাকা দেয়ার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তা দেননি। আর কোনো খোঁজখবরও রাখেননি রুয়েলের। আমার ভাইয়ের জীবনটাই শেষ!”
অপ্রাপ্ত বয়স্ক রুয়েলকে দিয়ে এমন রিস্কি কাজ করানো মোটেই উচিত হয়নি বলে মনে করছেন সচেতন ব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার আফজাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- “আমি রুয়েলকে কাজে নেইনি, নিয়েছে মতিন মোল্লা। এতো কম বয়সের ছেলেকে কাজে নেয়া ও টার টানানোর মতো রিস্কি কাজ করানো ঠিক হয়নি মতিন মোল্লার। এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকার নিকন এন্টারপ্রাইজ। আমি মিডিয়া হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মতিন মোল্লাকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে দুই লক্ষ টাকা রুয়েলের পরিবারকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। ১২ই আগস্ট তারা এ টাকা পাবে।”
এ ব্যাপারে মতিন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিবেকহীন ঠিকাদার ও তার লোকেদের কারণে রুয়েলের সোনালী ভবিষ্যত যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা প্রত্যেক সুনাগরিকের কর্তব্য।