১৩ বছরেও শেষ হয়নি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচার। রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। বিচারকাজ কবে শেষ হবে তাও জানে না রাষ্ট্রপক্ষ!
রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন, বিচারপ্রার্থীরা মামলার রায়ের জন্য আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের জন্য মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম খুব দ্রুত শেষ করা উচিত। আমরা আশাবাদী খুব দ্রুতই মামলা দুটির বিচার শেষ হবে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লেগেছে অনেক দিন। অপরদিকে মামলার সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। মামলার বিচারপ্রার্থীরা রায়ের আশায় আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের জন্য মামলা দুটির বিচার দ্রুত শেষ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলা দুটির বিচার কাজ শেষ করতে পারব। তবে কবে শেষ হবে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন সাফাই সাক্ষী চলছে। ইতোমধ্যে ১৩ জন ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। আর সাত-আটজনের সাফাই সাক্ষী নেয়া হবে। সাফাই সাক্ষীর পর মামলার যুক্তি উপস্থাপন হবে। এরপর মামলা দুটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপিকে সম্পূর্ণভাবে হয়রানি করার জন্য মামলা দুটি করা হয়েছে। মামলা স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিচ্ছে না সরকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাফাই সাক্ষী দেয়া হয়েছে ১৩ জনের। ২২ ও ২৩ আগস্ট সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার ১নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।