প্রতিনিধি, চুনারুঘাট : ভালো চাকুরি ও মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্র এদেশের গরীব ঘরের মেয়েদের প্রবাসে পাঠায়। পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে, অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে মেয়েরা পাড়ি জমান দূর প্রবাসে। সেখানে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি ওমানে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আজিবুলনেছা (৩২)। তিনি ওই উপজেলার রাণীগাঁও ইউনিয়নের তেরাশুল গ্রামের আব্দুল মতিনের মেয়ে।
টানা ৭ মাস নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আর্তনাদ করে কেঁদে কেঁদে দেশে ফেরার জন্য আকুতি জানিয়ে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন আজিবুলনেছা। তিনি নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমারে শুধু মারে। কাপালে বারি মাইরা দেখ গো আব্বা ফুলাই লাইছে। আমার চোখে মারছে। চোখের চারদিক কালা হইগেছে। এখন দেখতেও কষ্ট হয়।
আজিবুলনেছা আরো বলেন, তাড়াতাড়ি কইরা আমারে দেশে নেয়ার ব্যবস্থা কর গো আব্বা। শাহ আলম ভাই, হৃদয় ভাই হেরা আমারে ইখানো (ওমান) পাঠাইছে। তারারে কও আমারে দেশে নেয়ার ব্যবস্থা করতো।
পরক্ষণে মেয়েকে দেশে ফেরত আনতে আব্দুল মতিন শাহ আলমদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান পাননি। শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তু না পেয়ে গত সোমবারে হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে উপজেলার টেকেরঘাটের শুকুর আলীর পুত্র শাহ আলম, কৈয়াউড়ি গ্রামের হোসন আলীর ছেলে হায়দার আলী, করিম হোসেনের পুত্র সাইফুল ইসলাম হৃদয় সহ চার জন ও রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যেটি তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলা ও নির্যাতিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০ জুলাই ২০২২ তারিখে ভালো চাকরি ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আজিবুলনেছাকে ওমানে পাঠায় অভিযুক্তরা। মেয়েকে দেশে ফেরাতে তাদের কাছে মিনতি করেন আব্দুল মতিন। কিন্তু তারা সাফ সাফ জানিয়ে দেয়, আজিবুলনেছাকে দেশে আনতে ২ লাখ টাকা তাদের দিতে হবে। তিনি নিরুপায় হয়ে এক লাখ দেন। বাকি টাকা না দিতে পারায় দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না আজিবুলনেছাকে।
আজিবুলনেছাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা এখনো অবগত না। আজিবুলনেছার পরিবারের কেউ যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র প্রেরণ করবো।