তুলুজের স্ট্রাইকার অ্যান্ডি দেলোর যেন সবার মনের কথাটাই বলে দিয়েছেন। পিএসজির হয়ে প্রথম দুই ম্যাচেই নেইমার যা করেছেন, সেটা এর চেয়ে ভালো আর কোন উপমায় বোঝানো যায়! গেঁগাঁর মাঠে পিএসজি-অভিষেকে দলের তিনটি গোলের সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন। পরশু নিজেদের মাঠে তুলুজের বিপক্ষে ৬-২ গোলের জয়েও তা-ই। নিজে করেছেন জোড়া গোল। বাকি চারটি গোলেও ছিল তাঁর ছোঁয়া।
গোল করা আর করানোটাই তো আর মূল কথা নয়। জাদুকরি ফুটবলে চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে দিয়েছেন পার্ক দু প্রিন্সের গ্যালারিভর্তি দর্শকের। নেইমার-জাদুতে বিমোহিত প্রতিপক্ষের কোচ আর খেলোয়াড়ও। নেইমারের খেলা দেখে দেলোরের যেমন মনে পড়ে গেছে পিএসজিতে খেলে যাওয়া বার্সেলোনার সাবেক প্লে-মেকার রোনালদিনহোকে, ‘ঠিক রোনালদিনহোর মতো। বল পাওয়ার পর সে কী করবে, সেটা আমরা অনুমানই করতে পারতাম না। আমি জানি না ওকে (নেইমার) রোখার কোনো উপায় আছে কি না।’ সেই উপায় খুঁজে না পেয়েই বক্সের মধ্যে নেইমারকে ফাউল করে পেনাল্টির বাঁশি শুনেছেন দেলোর। ওই পেনাল্টি থেকেই পিএসজির তৃতীয় গোলটি করেছেন কাভানি।
নেইমার এমনই এক ধাঁধা হয়ে দেখা দিয়েছেন যে, ব্যতিক্রমী এক স্বস্তি খুঁজছেন দেলোর, ‘একমাত্র ইতিবাচক দিক বলতে চ্যাম্পিয়নশিপে ওদের সঙ্গে আর একবারই খেলতে হবে।’ তুলুজ কোচ পাসকাল দুপরাজও বড় পরাজয়ের হতাশা ভুলে নেইমারে আচ্ছন্ন, ‘সে ফুটবলের জন্যই এক উপহার। দুটি ম্যাচেই সে মন ভরিয়ে দেওয়া ফুটবল উপহার দিয়েছে।’
পিএসজির ঘরের মাঠে এটা ছিল নেইমারের অভিষেক। শুরু থেকেই এমন খেলছিলেন যেন মনের আনন্দে আঙিনায় খেলছে কোনো কিশোর। ১৮ মিনিটে পিএসজি পিছিয়ে পড়ার পর বাকি সময়টা তো পুরো নেইমারময়। দলকে ৩১ মিনিটে সমতায় ফেরান। এর আগে তাঁকে একবার গোলবঞ্চিত করেছে ক্রসবার, আরেকবার পোস্ট।
নেইমার-জাদুর আসল ঝলকটি যোগ করা সময়ে। বক্সের মধ্যে পাঁচ ডিফেন্ডারকে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বোকা বানিয়ে দুর্দান্ত এক গোল। যেটির পর পিএসজির সভাপতি নাসির আল-খেলাইফিকে দেখা গেল আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে। হাততালি দেওয়ার সময় তাঁর ঠোঁটের কোণে ছিল হাসির রেখা। যে হাসিতে মিশে ছিল দারুণ এক তৃপ্তি—২২২ মিলিয়ন ইউরো তাহলে অপাত্রে ঢালা হয়নি।
পরে নেইমার গোলটি নিয়ে মজাই করলেন, ‘আমার দ্বিতীয় গোলটার সময় কী হয়েছে, ঠিক মনে করতে পারছি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বলটা জালে গেছে।’ পিএসজিতে খেলে কতটা উপভোগ করছেন, তা বোঝাতে বললেন, ‘এরই মধ্যে নিজের বাড়ির মতো লাগছে এখানে। দলটি ব্রাজিলিয়ান ঢঙে খেলে। এটা আমাকে সাহায্য করছে।’
এই ম্যাচের আগে তুলুজের এক ডিফেন্ডার বলেছিলেন, নেইমার প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জীবন কঠিন করে তুলবেন। এমন খেলার পরও ম্যাচের পর নেইমার কিনা বলছেন, আরও উন্নতি করার জায়গা আছে, তা করতেও চান। ফরাসি লিগের ডিফেন্ডারদের সামনে অনেক বিনিদ্র রাত্রিই তাহলে অপেক্ষা করছে! এএফপি, রয়টার্স।