নিজস্ব প্রতিনিধি: বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা তানিয়া আক্তারের লেখাপড়ায় অদ্যম আগ্রহকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সে অন্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) কেন্দ্র বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তার সন্ধান মেলে। সে উপজেলার পশ্চিম ভাদেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম ও গৃহিনী রওশন আরা বেগম-এর সন্তান তানিয়া আক্তার জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
সরজমিন উপজেলার সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সোমবার সকালে বাংলা বিষয়ে পরীক্ষা চলাকালে দেখা যায়, ২নং কক্ষে মনোযোগ দিয়ে খাতায় লিখে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী তানিয়া আক্তার। পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষককের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তার কাছে যেতেই একবার মুখ তোলে তাকিয়ে আবার উত্তরপত্রে লিখায় মগ্ন হয়ে পড়ে শিশুটি।
এ ব্যাপারে ওই প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব মোঃ সাজিদুর রহমান বলেন, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী তানিয়া আক্তার স্বাভাবিক শিশুদের সাথে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষার খাতা জমা দেয়ার সময় তাকে নিয়ম অনুযায়ী বাড়তি সময় দিতে চাইলেও প্রথম দিনের ইংরেজী পরীক্ষায় তার সে সুবিধার প্রয়োজন পড়েনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তানিয়া আক্তার-এর মা রওশন আরা বেগম বলেন, আমার মেয়ে জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। কিন্তু সে অন্যান্য শিশুদের মতোই লেখাপড়া, খেলাধুলা ও সাজগুজে অত্যন্ত আগ্রহী। ইশারা, অঙ্গভঙ্গি ও মুখাভিনয়ের মাধ্যমে তাকে সবকিছু সহজে বোঝানো যায়। তার প্রতিবন্ধী কন্যাকে বহু কষ্টে লেখাপড়া করিয়ে পিইসি পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনেক চেষ্টা তদবির করে তানিয়া আক্তারকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবন্ধী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করালেও এখন পর্যন্ত সে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়নি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নসরাত ই-এলাহীর সাথে যোগাযোগ করা হলে ওই প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী সম্পর্কে তেমন কোন তথ্যই দিতে পারেননি। সে প্রতিবন্ধী ভাতা পায় কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই।’
পশ্চিম ভাদেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রতিবন্ধী তানিয়া খুবই শান্ত স্বভাবের। সে কারো সাথে ঝগড়া বিবাদে কখনও লিপ্ত হয়নি। সে সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসে। ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সে অত্র বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। কিন্তু তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও সকল শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় সে আজ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বসতে পেরেছে। আশা করি পরীক্ষায়ও সে ভাল ফলাফল করবে।