নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রতারণা মামলায় রিক্সা চালক থেকে কোটিপতি হওয়া আলোচিত প্রতারক জিতু মিয়াকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছে আদালত।
বুধবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট তৌহিদুল ইসলাম এ রায় প্রদান করেন। সে বানিয়াচং উপজেলার তাজপুর গ্রামের মৃত কালাই মিয়ার পুত্র।
এর আগে ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলার তিমিরপুর গ্রামের ছানু মিয়ার ছেলেকে বিদেশ নেয়ার শর্তে ২ লাখ টাকা নেয় জিতু। কিন্তু তার ছেলেকে বিদেশ না নিয়ে প্রতারণা করে। এ অভিযোগে ছানু মিয়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্বাক্ষিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় প্রদান করেন। বাদিপক্ষে মামলা পরিচালনা করে এডভোকেট নিলাদ্রি শেখর পুরকায়স্থ টিটু।
উল্লেখ্য, আলোচিত রিক্সা-চালক থেকে কোটিপতি জিতু মিয়ার বিরুদ্ধে শুধু মানব পাচারেই অভিযোগ নয়। মানুষের সাথে প্রতারণা, নারী কেলেংকারী, মিথ্যা মামলায় লোকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়াসহ ফাঁদে ফেলে জমি আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের মৃত কালাই মিয়ার পুত্র রিক্সা-চালক জিতু মিয়া আজকের কোটিপতি এক কালে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি এখন আগুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেছেন। রাতারাতি তার এই ফুলে ফেপে উঠার নেপথ্য কারণই জানেন না স্থানীয় অনেকেই। তবে এ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কোটিপতি জিতু মিয়া সর্ম্পকে বলতে গিয়ে অনেকেই জানান, কয়েক বছর আগে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় তিনি সৌদি আরব যান। সেখানে থাকাকালীন লোকজনকে সৌদি নেয়ার কথা বলে প্রতারণা শুরু করেন। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন সময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এক পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশে ফিরেই একে একে দুই পুত্রকে দুবাই পাঠান।
ভূমিহীন জিতু মিয়া রাতারাতি শত শত একর জমি ও বেশ কটি বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে যান। তার ভাঙ্গা ঘরে গজিয়ে উঠে বিশাল অট্টালিকা। এলাকায় বেড়ে যায় প্রভাব-প্রতিপত্তি। এক পর্যায়ে তিনি নাম লেখান দখলবাজারের খাতায়। তার চাচাতো ভাই বজলু মিয়ার কবরস্থানের জমিসহ অনেকের বিষয় সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করেন। প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে করেন হয়রানি। বর্তমানে স্থানীয় সালিশকারী, জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তি কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না তিনি। বলা যায়, তিনি এখন ওই এলাকার মুকুটবিহীন সম্রাট।
বড় ধরণের কোন আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও রাতারাতি গাড়ি, বাড়িসহ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান জিতু মিয়া। তথ্যকালিন সময়ে তার মালিকাধানীন একটি নোহা যার নং-৯২২৪, একটি লাইটেস যার নং১১-৩৭০৮, দুটি ট্রাক একটি ট্রাকের নং১১-৫১৬৬, হবিগঞ্জ নবীগঞ্জ সড়কে একটি বাস নং ১৪৬৪ রয়েছে। তিনি দৌলতপুর গ্রামে সাড়ে ১৮ লাখ টাকার জমি কিনেছেন। এছাড়াও তার নামে বিভিন্নস্থানে আরো অনেক জমি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন জিতু মিয়া কোন অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।