অনলাইন ডেস্ক : পদত্যাগ নয় বরং দীর্ঘকালীন ছুটিতে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সুপ্রিম কোর্টে আজ থেকে এক মাস ২০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হলে, প্রধান বিচারপতির ছুটি দীর্ঘস্থায়ী হবে। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। এ পর্যন্ত তিনি ছুটিতে থাকবেন। তাঁর ছুটিকালীন সময়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওহাব মিঞা এবং বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন পর্যায়ক্রমে প্রধান বিচারপতির অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকার প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চাইলেও শেষ পর্যন্ত ছুটির মধ্যস্থতা দুপক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব আছে ছয় মাসেরও কম। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরপরই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। এই টানাপোড়েন প্রকাশ্য রূপ নেয় প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে বসে পাকিস্তানের রায়ের প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ টানলে। আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা এবং অঙ্গসংগঠন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রধান বিচারপতির সমালোচনা শুরু করেন। এখন সবাই প্রকাশ্যে তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন। আজ এক বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তাঁর বক্তব্য গণমাধ্যমে ভুলভাবে এসেছে, এর ফলে তাঁকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁর বক্তব্য প্রচারে তিনি সর্বাধিক সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই বিবৃতির দাবি গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ।
এরকম নাজুক পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু পদত্যাগ নয় বরং তিনি ছুটিতে যেতে আগ্রহী। এজন্য প্রধান বিচারপতি কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হলো, তাঁকে নিয়ে যে বিরূপ এবং বিদ্বেষমূলক সমালোচনা শুরু হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও তাঁকে এবং তার আত্মীয় স্বজনকে ভাবিষ্যতে হয়রানী না করা সহ বেশ কিছু বিষয় প্রধান বিচারপতি উত্থাপন করেছেন। এসব ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেলে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটির দরখাস্ত করবেন।
প্রধান বিচারপতি এখনো মনে করেন সরকার যা করছে তা ভুল। বিশেষ করে যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করা হচ্ছে তাতে বিচারবিভাগের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া প্রধান বিচারপতি মনে করেন, চাপ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে এভাবে সরে যেতে হলে ভবিষ্যতে কোনো বিচারপতি নির্ভয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারবে না। এবং এটা ক্ষমতাসীন দলের জন্য একটা উদাহরণ হবে।
তবে, সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, রায় নিয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য নেই। তাঁদের বক্তব্য রায়ের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক এবং আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে। আওয়ামী লীগ মনে করে, এই রায় এই আদলে মেনে নেওয়া হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।
প্রধান বিচারপতি সঙ্গে সরকারের আলাপ আলোচনা এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এই ছুটির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ছুটিতে সরকার সন্তুষ্ট কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।