1. info@jonomoth.com : admi2017 : জনমত নিউজ
  2. jonomoth24@gmail.com : Jonomoth .com : Jonomoth News .com
  3. wpsupp-user@word.com : wp-needuser : wp-needuser

চুনারুঘাটে জমি সংক্রান্ত স্বার্থেই ব্যকস সভাপতিকে খুন করে ঘাতকরা: পরিবারের দাবি

চুনারুঘাট প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, আহলে সুন্নাতওয়াল জামাত চুনারুঘাট উপজেলার সভাপতি, ও প্রবীণ মুরব্বী আলহাজ্ব আবুল হোসেন আকল মিয়াকে (৬৮) জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই খুন করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

শহরের বাল্লা রোডে সাড়ে ৫ শতক জমি নিয়ে বিরোধ থেকেই প্রভাবশালীর সহযোগিতায় শহরের ধান চাল ব্যবসায়ী রঞ্জন পালের নেতৃত্বে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে।

শুক্রবার (০২ মার্চ) দিবাগত রাতে নিহতের ছেলে নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো অনেকে জড়িত উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় বাজারের ব্যবসায়ী রঞ্জন পাল, পৌর কমিশনার চন্দনা গ্রামের কুতুব আলী ও শহরের মধ্যবাজারে উচ্ছেদকৃত মা ভেরাইটিজ স্টোরের দোকান মালিক জসিম উদ্দিন শামীম এবং আমকান্দি গ্রামের সুমন মিয়াকে আসামী করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ এজাহারভুক্ত ৪নং সুমন মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। সে পৌর এলাকার উত্তর আমকান্দি গ্রামের মফিজুল হকের পুত্র। সে পেশায় অটোরিক্সা চালক। পুলিশ ঘটনার দিন সকালেই তার ভাড়াটিয়া অটোরিক্সাটি (সিএনজি) শহরের সতং রোড এলাকা থেকে উদ্ধার করে। অটোরিক্সা উদ্ধারের ২ দিনের মাথায়ই সে গ্রেফতার হলো।

হাজী আবুল হোসেন আকল মিয়া হত্যার পর থেকেই শহরের এক ধরনের অজানা আতংক বিরাজ করছে। সন্ধার পরই শহরে মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। বিশেষ করে বাল্লা রোডে মাদ্রাসা পর্যন্ত মানুষ যেন আতংকগ্রস্থ। শুক্রবার রাত ৮টার পরই দেখা যায় এ রাস্তা ফাঁকা। মানুষজন মুল সড়ক হয়ে বাসাবাড়িতে চলাচল করছে। তবে শহরে ব্যাপক পুলিশ পাহাড়া রয়েছে। তবে ঘটনার দিন থেকেই র‌্যাব, পিবিআই, ডিবি, ডিএসবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা শহরে সাদা পোষাকে চলাফেরা করছে। তারা নানা তথ্য উপাথ্য সংগ্রহে কাজ করছে থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম (ওসি)আজমিরুজ্জামান জানিয়েছেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতে এসেছিলেন, সাবেক বিচারপতি, শ্রম আপীল ট্র্যাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই এবং তাঁর ছেলে তরুণ সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল হাই রাজিব।

শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই


এসেছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র।

নিহত আকল মিয়ার বড় ছেলে নাজমুল ইসলাম বকুল বাদী হয়ে ৪ জনের নামে চুনারুঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় তিনি বলেন, আমার পিতা চুনারুঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও আহলে সুন্নাতওয়াল জামাত চুনারুঘাট উপজেলার সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থেকে দীর্ঘদিন যাবত চুনারুঘাট থানার একজন বিশিষ্ট মুরব্বী হিসাবে বিভিন্ন শালিস বিচারে বিচারকের ভুমিকা পালক করে আসছিলেন। আমার মরহুম পিতার চুনারুঘাট বাজারে আল মদিনা মার্কেট, স’মিল বিভিন্ন দোকান ঘরসহ জমি রয়েছে।

প্রায় এক বছর যাবত চুনারুঘাট বাজারের বাল্লা রোড গ্রীণ সুপার মার্কেট সংলগ্ন তপশীল বর্ণিত থানা-চুনারুঘাট, মৌজা- বড়াইল, জেএল নং ৬৬, খতিয়ান নং-৪০৪৭, সাবেক দাগ ১৩১৩/১৩০৯ বর্তমান ৪০০১এর মধ্যে ০.৫৫৬ শতক ভ’মি নিয়ে চুনারুঘাট বাজারের বালøা রোডের মৃত রবীন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে ব্যবসায়ী রঞ্জন পাল (৪৮) পৌর শহরের চন্দনা গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে মোঃ কুতুব আলী (৪৮) (বর্তমান কমিশনার), শায়েস্তাগঞ্জ থানার জহুরচান বিবি মহিলা কলেজের সামনের বাসিন্দা বর্তমানে চুনারুঘাট পৌরসভার বড়াইল গ্রামের মৃত শামছুদ্দীন চৌধুরীর ছেলে জমিম উদ্দিন শামীম (৩২) ও পৌর শহরের উত্তর আমকান্দি গ্রামের মুজিবুল হকের ছেলে সুমনসহ (২০) স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সাথে চরম বিরোধ ও মনোমালিন্য চলে আসছিল।

তার পিতা আকল মিয়ার মাধ্যমে জনৈক আছমা বেগম ও শিরিন আক্তার বাদী হইয়া অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি এর ১৪৪ ধারায় মামলা ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমল আদালত নং ২ এ মামলা দায়ের করলে উক্ত মামলা দুটি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এ অবস্থায় গত ১ মার্চ/১৮ই রোজ বৃহস্পতিবার ভোর অনুমান সাড়ে ৫ ঘটিকার সময় আমার পিতা ফজরের নামা পড়ার জন্য বাল্লা রোডস্থ স্থানীয় আল মদিনা মসজিদে যাওয়ার পথে বাল্লা রোড মতিন মহাজন এর ভাড়াটিয়া রঞ্জন পালের মেসার্স সততা ট্রেডার্স দোকানের সামনে পৌছামাত্রই উক্ত জমির বিরোধের জের ধরে রঞ্জন পালসহ ৪ আসামী এবং অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পিছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্র ও হাতুরি দিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুঠিয়ে পড়েল পরে দুর্বৃত্তরা তাকে টানা হেচড়া করে পাশে বিছমিল্লাহ ট্রেডার্স সংলগ্ন প্রাইমারী স্কুলের গলিতে নিয়ে উপর্যুপরি মাথা ও মুখে আঘাত করে গুরুতর জখম করে ফেলে যায়।

ফজরের নামাজের পর স্থানীয় বাসিন্দা তুরাব আলী, মেন্দি মিয়া ও প্রাতঃভ্রমনে বের হওয়া রাবিয়া খাতুনসহ অনেকেই সুর চিৎকার দিলে লোকজন এসে আহত অবস্থায় আবুল হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে চুনারুঘাট ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। মেডিকেলে নেওয়ার পথে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এলাকায় পৌছলে তার পিতা আবুল হোসেন এর কিছুটা জ্ঞান ফিরলে তিনি হত্যাকারীদের নাম তার কাছে বলে যান। বাদী নাজমুল ইসলাম বকুল এজাহারে জানায়, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই অপরাপর প্রভাবশালী ও দুর্বৃত্তের সহায়তায় পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে তার পিতাকে হত্যা করেছে।

এদিকে আটককৃত সুমন উপজেলার শাইলগাছ এলাকার জনৈক লোকের অটোরিক্সা চালাতো। সে ঘটনার আগের দিন রাতে উদ্ধারকৃত অটোরিক্সাটি তার নির্ধারিত বড়াইল এলাকার গ্যারেজে রাখে নাই। ঘটনার দিন সকালে শহরে সতং রোড এলাকা থেকে পুলিশ সন্দেহজনক ভাবে অটোরিক্সাটি আটক করে।

জানা গেছে, গ্যারেজের মালিক জানিয়েছেন ঐ দিন সে অটোরিক্সাটি গ্যারেজে রাখে নাই। কিন্তু সুমন জানিয়েছে সে অটোরিক্সাটি গ্যারেজে রেখেছিল এবং সকালে বের করে নিয়ে এসে সিরিয়াল ধরেছে। এ নিয়ে উভয়ের কথায় মিল পাওয়া যাচ্ছেনা।

তবে পুলিশ জমিসহ সবগুলা বিষয় নিয়েই তদন্ত করছে।

চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে এম আজমিরুজ্জামান জানান, নিহতের ছেলে নাজমুল ইসলাম বকুল বাদী হয়ে ৪ জনের নামে থানায় মামলা দিয়েছেন। আমরা সে অনুপাতেই তদন্তের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। খুব দ্রুত আপনারা এসব বিষয়ে সকল তথ্য পাবেন।

মামলার ৪নং আসামী আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিবি রাতে এ আসামী ধরেছে। আমরা জিজ্ঞাসাবা করার পর বিস্তারিত জানাতে পারব।

এদিকে চুনারুঘাট ব্যবসায়ী সমিতি শনিবার (০৩ মার্চ) থেকে ৩ দিনের কর্মসূচী পালন করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যকস এর জরুরী সভায় শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রত্যেকের দোকানের সামনে নিজ উদ্যোগে কালো পতাকা উত্তোলন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এছাড়ার সোমবার (০৫ মার্চ) বিকাল ৪টায় পৌর শহরের মধ্যবাজারে মানববন্ধন, কালো ব্যাচ ধারণ এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

ব্যকসের শোক সভায় উপস্থিত ছিলেন-চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর, অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন চৌধুরী, আলহাজ্ব ছালাম তালুকদার, হাজী মীর হোসেন, আলহাজ্ব ছিদ্দিকুর রহমান মাসুদ, আবুল মহালদার, হাজী ছমির হোসেন, আলহাজ্ব আতাহার আলী, আলহাজ্ব রেজাউল করিম মাসুক, আজগর আলী, হাজী আকরব হোসেন, হাজী দানিছ মিয়া, হাজী আছান উল্লাহ, আবুল কালাম, নুরুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, জাহাঙ্গীর আলম, মীর সায়েব আলী, শফিউল আলম জুয়েল, জাকির হোসেন, মানিক মিয়া, উসমান মিয়া, কামাল উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, গোপাল দেব, নিশী শীল, মোঃ নুহু মিয়া, সাজিদুল ইসলাম সাজিদ প্রমুখ।

শোক সভায় নেতৃবৃন্দরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এ ধরণে নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওয়াতায় এনে শাস্তির দাবী জানান।

এ দিকে নিহতের পরিবারকে সান্তনা জানাতে চন্দা গ্রামে উপস্থিত হয়েছিলেন সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, হবিগঞ্জের সাবেক সফল পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র। এসময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা, ডিবি ওসি শহ আলম, চুনারুঘাট থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান।

এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সভাপতি ও সাবেক ব্যবসায়ী নেতা মরহুম আবুল হোসেন আকল মিয়া হত্যাকারী যত বড় প্রভাবশালী নেতা হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে। খুই শীঘ্রই হাজী আকল মিয়া হত্যার রহস্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এ সময় সবাইকে শান্ত থাকারও পরামর্শ দেন।

     এই ক্যাটাগরীর আরো খবর