ফয়সল আহমেদ তারেক : আগামী ১৬ মে বুধবার সন্ধ্যায় চলতি বছরের পবিত্র মাহে রমজান মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে। সে অনুযায়ী ১৭ মে থেকে শুরু হতে পারে পবিত্র রমজান। সে অনুযায়ী বুধবার রাতে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে বৃহস্পতিবার পবিত্র রমজান শুরু হবে বাংলাদেশে। বছর ঘুরে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারো এলো মাহে রমজান। শুরু হবে সংযম সাধনার মাস। খোশ আমদেদ মাহে রমজান। আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের সেরা সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের অভাবনীয় মৌসুম। সিয়াম-সাধনা, ইবাদত-বন্দেগি, যিকির-আযকার এবং তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত। মহান আল্লাহপাক এই মাসের প্রতিটি দিবস-রজনীতে দান করেছেন মুষলধারায় বৃষ্টির মতো অশেষ খায়ের-বরকত-মাগফিরাত এবং অফুরন্ত কল্যাণ।
রমজানের রোজা হচ্ছে ইবাদতের মাঝে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, সালাত ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। রোজার আরবি শব্দ সাওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। সাওম হলো, প্রত্যেক সন্তান, বালেগ মুসলমান নর-নারীকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পনাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা। কোনো মুসলমান যদি রমজান মাসের একটি রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে বড় গুনাহগার ও জঘণ্য অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের খেয়ানতকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হল রোজা। দীর্ঘ এগারটি মাসের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এ মাস। রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। আর এ জন্য রোজা মুসলমানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। বহু ফজিলত ও পুণ্যময় বৈশিষ্ট্যের আঁধার এ মাসটিতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। এ মাসেই রয়েছে সহস্র মাসের চেয়ে সেরা একটি রাত- লাইলাতুল কদর। তবে এই মহা মহিমান্বিত রাতটি আসবে রমজানের শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য এ মাসের প্রতিটি দিন রোজা রাখা ফরজ। ক্ষমাপ্রাপ্তি ও জান্নাত লাভের মাস হিসেবেও কুরআন হাদিস শরিফে একে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুণ্য লাভ, ক্ষমাপ্রাপ্তি, ধৈর্য, সহানুভূতি, দানশীলতা ও সংযম সাধনার এ মাসটিকে মনীষীরা তাই ‘পুণ্যের বসন্ত’ বলে থাকেন।
রমজান মাসের নাম এসেছে আরবি ‘রামাদ’ শব্দ থেকে। এর অর্থ ‘তপ্ত’ বা ‘শুষ্কতা’। প্রথম রমজান মাস পালিত হয়েছিল গ্রীষ্মে, সে জন্যই এমন নামকরণ করা হয়েছে। নামকরণের আরেকটি প্রতীকী কারণ হচ্ছে, গ্রীষ্মের সূর্য যেমন পৃথিবীকে দগ্ধ করে, তেমনি এই মাস সব পাপকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
#রমজানের ফজিলত:
রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দেব। [সহিহ বুখারি] রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজান মাসে যে একটি নফল আদায় করলো সে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। [সহিহ ইবনে খুযাইমা] রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। [সহিহ বুখারি] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানে একটি রোজাও ভঙ্গ করে, তিনি আজীবন রোজ রাখলেও এ রোজার হক আদায় হবে না। হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালা নিজের উপর অবধারিত করে দিয়েছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজা রাখার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রোজা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসুল (সাঃ) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬) হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, শপথ সেই সত্ত্বার যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (সহীহ বুখারি ১৯০৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ইফতারের সময় রোজাদার যখন দুয়া করেন তখন তার দুয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ দুয়া কবুল করা হয়) (সুনানে ইবনে মাজাই ১৭৫৩)
#রোজার নিয়ত:
বাংলায় উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিনশাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহ ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।
অর্থ: হায় আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের রমাদ্বান শরীফ-এর ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।