রায়হান আহমেদ : পর্যটকদের দৃষ্টিনন্দন স্থানের মধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের ১০ টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অন্যতম। এর আয়তন ২৪২.৮২ হেক্টর বা ছয়শ’ একর। ইদের ছুটিতে পর্যটন পিপাসুদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানকে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্যানে বেড়ানোর জন্য রয়েছে দক্ষ ইকো গাইড। নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ ও বিজিবি’র পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও নিয়োজিত করা হয়েছে। তাদের পাশাপাশি রয়েছে পর্যটন সহায়ক পুলিশ। চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে রয়েছে পুলিশের মোবাইল টিম। তারা ইদের কয়েকদিন পূর্ব থেকেই উদ্যান এলাকায় টহল দিচ্ছে।
এ উদ্যান চুনারুঘাটের একটি মূল্যবান সম্পদ। সাতছড়ি অর্থ ‘সাতটি ছড়া’। যেগুলো বনভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রঘুনন্দন পাহাড় সংরক্ষিত বনের অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বনভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাজার বছরের পুরনো এ বনে দেখা মেলে নানা ধরনের বিরল বন্যপ্রাণী। বিশেষ করে পাখি-প্রেমীদের জন্য এটি স্বর্গভূমি। এখানে ২০০৯ সালে প্রবেশের জন্য চালু করা হয় টিকেট ব্যবস্থা। এর ভেতরে রয়েছে ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার, ট্রি এডভেন্সার সেন্টার, বসার বেঞ্চসহ নানা অবকাঠামো। রয়েছে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনায় আগত পর্যটকদের জন্য রয়েছে টুরিষ্ট স্পট, বসার বেঞ্চ, বণ্যপ্রাণীর আভাসস্থল, দোলনা, বিলবোর্ড, পানি ও টয়লেট ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে ফরেষ্ট গেস্ট হাউজ, স্টুডেন্ট ডরমিটরি, ইন্টার পিটিশন সেন্টার ও ইকো-কটেজগুলো পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করছে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০’শরও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে সিধাজারুল, শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, জাম, জামরুল, মালেকাস, চাপালিশ, আওয়াল, পাম, মেহগনি, ডুমুর, ইউক্যালিপটাস, কৃষ্ণচূড়া, আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদি। এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। এদের মধ্যে বানর, লজ্জাবতী বানর, হনুমান, চশমা বানর, বনবিড়াল, কুুলু বানর, মেছোবাঘ ইত্যাদি। আরো আছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি। তাই বলা হয় এটি দেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল জানান, পর্যটকদের কথা চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছি। তাছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করেছি। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, বিজিবি এবং আলাদা মোবাইল টিম রয়েছে। তাছাড়াও এ বিষয়টি বাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কে.এম আজমিরুজ্জামান জানান, এ বছর ইদকে সামনে রেখে সাতছাড়ি উদ্যানে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনব্যাপী পুলিশ টহল দিচ্ছে উদ্যান এলাকা। অপ্রীতিকর অবস্থার যেন সৃষ্টি না হয় এজন্য ইদের কয়েকদিন আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে রয়েছেন। আমি নিজেও গিয়ে বিষয়টির তদারকি করছি।
অন্যদিকে উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় গ্রীণল্যান্ড পার্কেও পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।