আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট : চা বাগান অধ্যুষিত হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। ১৭টি চা বাগান রয়েছে এই উপজেলায়। অধিকাংশ চা বাগানেই নেই কোনও বিদ্যালয়। সেখানে উচ্চ বিদ্যালয় থাকা কল্পনা বিলাস মাত্র। তবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লাল চান্দ চা বাগানে বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, পাহাড়ি অধ্যুষিত ওই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিবে প্রতিষ্ঠানটি। এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন বন বিভাগের পাদদেশে অবস্থিত লাল চান্দ চা বাগানসহ ওই এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে নেই কোনও উচ্চ বিদ্যালয়। এলাকার রাস্তাাঘাটও অনুন্নত। ফলে কয়েক ঘন্টা পায়ে হেটে যেতে হয় দুরবর্তী কোনও স্কুলে। আবার রয়েছে গাড়ি ভাড়ারও ঝামেলা। পাহাড়ি এলাকার জনগণের পক্ষে এই ঝামেলার মোকাবেলা করা বাচ্চাদেরকে লেখাপড়া করানোর প্রতি ছিল না তেমন আগ্রহ। বিষয়টি নজরে আসে, চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহেরের। এর আগেও তিনি কয়েকটি চা বাগানে হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করার অভিজ্ঞতা থাকায় উদ্যোগ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতি।
শুক্রবার দুপুরে চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সকল চা বাগানের আইন উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবুল খায়ের।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- লালচান্দ চা বাগানের ম্যানেজার মোফাজ্জল হোসেন, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ ফখরুজ্জামান, দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ আহমেদ, চুনারুঘাট উপজেলা প্রকৌশলী মিশুক দত্ত, আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা শফিক মিয়া তরফদার, আবুল কালাম চৌধুরী, চা শ্রমিক নেতা সাগর গৌরী, নৃপেন পাল, বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা সুদীপ রায় প্রমুখ।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহেরের প্রচেষ্টায় লালচান্দ চা বাগানে ১ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু হাইস্কুলের যাত্রা শুরু হয়। আগামী জানুয়ারি থেকেই সেখানে পাঠদান শুরু হবে। ওই এলাকায় কোনও হাইস্কুল না থাকায় এলাকাটি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা চেয়াম্যান আবু তাহের বলেন, উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে ইতোমধ্যে হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অবহেলিত এলাকাগুলোকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
লালচান্দ চা বাগানের শ্রমিক সুনিতা বাউড়ি বলেন, তার তিন সন্তানের কেউই হাইস্কুলে যেতে পারেনি এলাকায় কোনও স্কুল না থাকায়। এই স্কুলটি হওয়ায় এখন আর কেউ উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না। সবিতা বাউড়ি বলেন, তার মেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ কলেজে লেখাপড়া করছে। অনেক কষ্টে তিনি তাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। এখন বিনা খরচে সন্তানদেরকে হাইস্কুলে লেখাপড়া করানো যাবে।
হবিগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবুল খায়ের বলেছেন, চা শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে অবহেলিত। লাল চান্দ চা বাগানে মনোরম পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি চা শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবে। শুধু তাই নয়, আশেপাশের এলাকার জনগণও এই স্কুলের মাধ্যমে উপকৃত হবে।
চুনারুঘাট উপজেলা প্রকৌশলী মিশুক দত্ত জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। দেড় মাসের মধ্যেই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ হবে। শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। জানুয়ারীর ১ম সপ্তাহ থেকেই সেখানে ক্লাশ শুরু হবে।