সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, জনমত : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হবিগঞ্জের রাজনীতি যেন অনেকটা থমকে দাড়িয়েছে! কোন রাজনৈতিক দলকেই এখন আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি) ঘরমুখো আর আওয়ামী লীগ রয়েছে বিভিন্ন সরকারি দিবস পালন নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে (জাপা) খোঁজেই পাওয়াই দায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় অনেকটা জিমিয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। শুধুমাত্র সরকারি ও দলিয় বিভিন্ন দিবস পালন ছাড়া সব ধরণের সাংগঠিনক বা রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে সড়ে পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে সব হারিয়ে নিঃস্ব বিএনপিও অনেকটা ঘরমুখো হয়ে পড়েছে। চার দেয়ালের ভেতরেই চলছে সব ধরণের কার্যক্রম। শুধুমাত্র জেলা ছাত্রদলের একটি অংশ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি ও তাদের কোন অঙ্গ সংগঠনকে মাঠে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও চার দেয়ালের ভেতরে অনেকটা পুতুল খেলার মতো পালন করছে জেলা বিএনপি।
মাঠ পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির চরম সংঙ্কটের সময়েও হবিগঞ্জ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা বিএনপিতে রয়েছে অন্তঃকোন্দল। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর দলের প্রতি মনোক্ষুন্ন রয়েছে। আবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিস্কার দলটির মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সাংগঠনিক দিক থেকে ছিন্ন-ভিন্ন বিএনপি মাঠে নামতে পারছে না।
তবে শুধু যে বিএনপিতে অন্তঃকোন্দল রয়েছে তা উড়িয়ে দিলেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের তথ্যমতে জেলার ও উপজেলা আওয়ামী লীগেরও রয়েছে অনেক বড় ধরণের কোন্দল। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া অনেক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে বসেন। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহি প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন তাঁরা। সেখান থেকে তৈরীকৃত কোন্দল এখনও আওয়ামী লীগের মধ্যে স্ব-মহিমায় বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, হবিগঞ্জে জাতীয় পার্টিকে হারিকেন দিয়েও খোঁজে পাওয়া দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির কোন নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে খোঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী।
বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের এমন অবস্থায় হবিগঞ্জের রাজনীতি কোন দিকে গড়াচ্ছে তার দিশে পাচ্ছেন না কেউই। সাধারণ মানুষ থেকে শুধু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মেলাতে পারছেন না হবিগঞ্জ জেলার রাজনীতির সমিকরণ!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বিএনপি যদি মাঠে না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের কি করার আছে। সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তার গতিতেই চলছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা হয়রাণি করছে এমন অভিযোগ করার সুযোগ নেই।’
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহিন বলেন, ‘নির্বাচনের পর কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসুচি দেয়া হয়নি। তাই বিএনপি মাঠে নেই। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি কয়েকজন নেতাকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ফলে বিএনপিতে এখন অনেকটা অন্তদ্বন্দ্ব রয়েছে।’
সিনিয়র রাজনীতিবিদরা বলছেন, ‘একটি এলাকার উন্নয়নের জন্য রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ রাজনীতি থাকলে সরকারি দল কোন অনিয়ম করতে পারে না। বিরোধিদল তার প্রতিবাদ করতে পারে। কিন্তু উভয় দলের মধ্যে কিছু সমস্যা থাকার কারণে হবিগঞ্জের রাজনীতি জিমিয়ে পড়েছে।