জনমত রিপোর্ট : আট বছরের হাসিখুশি শিশু জায়ান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের নাতি সে। শেখ সেলিম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই।
বাবা-মায়ের সঙ্গে বনানীর ২/এ সড়কের ৯ নম্বর বাড়িটিতে থাকতো সে। শান্ত-সৌম্য, ক্রিকেট খেলার দারুণ ভক্ত জায়ানের পদচারণায় যে বাড়িটি মুখরিত থাকতো আজ সেখানে শুধুই শোকের কালো ছায়া, কান্নার রোল আর শূন্যতার হাহাকার।
জায়ান আসছে, সে অপেক্ষাতেই সকাল থেকে দলীয় নেতা-কর্মী ও আত্মীয় স্বজনের ভীর লেগেছিল বনানীর বাড়িটিতে। বাড়িতে মানুষের চোখে যেমন পানি, কণ্ঠে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ছিল তেমনি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতেও ব্যস্ত ছিল অনেকে।
বাবা-মা, ভাইয়ের সঙ্গে ইস্টার সানডের ছুটিতে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিল সে। সে যাওয়াটাই কাল হয়েছে তার পরিবারের জন্য।
শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ হামলায় মারা যায় জায়ান, তার বাবা গুরুতর আহত হন। মা ও ছোটভাই অক্ষত থাকলেও ঘটনার আকস্মিকতায় গোটা পরিবার এখন বিধ্বস্ত।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপরে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে জায়ানের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দুপুর পৌনে একটার দিকে জায়ানের নানা শেখ ফজলুল করিম সেলিম মরদেহটি গ্রহণ করেন।
১৫/২০ মিনিটের মধ্যে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহবাহী গাড়ি দুপুর ১টা ৮ মিনিটে বনানীর বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে দেড়টায় এসে পৌঁছায়। জায়ানের নিথর দেহ শেষবারের মত বনানীর বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে তাকে দেখতে আসেন আদরের নানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রুনাই সফরে থাকা অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার হামলায় নাতি ও ভাতিজি জামাইয়ের আহত হওয়ার খবর দেন সবাইকে। তিনি তাদের সুস্থতার জন্য সবার দোয়া চান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা যায়, জায়ান চিরতরে ওপারে চলে গেছেন।
জায়ানের সঙ্গে শেখ হাসিনার দারুণ দুষ্ট মিষ্ট সম্পর্ক ছিল। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে দেখলেই জায়ান ‘দাদু’/ ‘দাদু’ বলে দৌড়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরত। প্রধানমন্ত্রীও চোখে মুখে চুমু একে দিয়ে তার কাছে বিভিন্ন কিছু জানতে চাইতেন।
জায়ানের বেশ কয়েকটি সূরা মুখস্থ ছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রায় সময়েই তার কাছে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে চাইতেন। জায়ানও তখন ওযু করে, পাঞ্জাবি গায়ে, টুপি মাথায় দিয়ে প্রিয় দাদুকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাত।
সেই আদরের নাতিকে হারানোর শোক নিয়েই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরেই তার দেখা হয় ভাই শেখ সেলিমের সাথে। নাতি হারানোর শোকে ভাই-বোন সেখানেই সবার সামনে আবেগাপ্লুত হয়ে যান।
এরপর থেকেই দুজনে অপেক্ষায় ছিলেন কখন আসবে প্রিয় নাতির মরদেহ। শেষ দেখা দেখবেন সবাই।
অবশেষে দুপুরে জায়ানের মরদেহ বনানীর বাড়িতে এলে বেলা আড়াইটায় সেখানে এসে উপস্থিত হন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনদের অনেকেই। আবেগঘন পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী সেখানে প্রায় দেড়ঘণ্টা অবস্থান করেন। একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেন, সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে বাদ আসর জানাজা শেষে ছোট্ট জায়ানকে বনানী কবরস্থানে চিরতরে সমাহিত করা হয়। জানাজাস্থলের জায়ান্ট স্ক্রিনে ছোট্ট জায়ানের মুখখানি যখন ভেসে ওঠে তখন সেখানে উপস্থিত অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। ধর্মের নামে যে সন্ত্রাসবাদ দাদুকে তার নাতির থেকে কেড়ে নেয়, বাবা-মাকে সন্তানের থেকে আলাদা করে দেয় সে সন্ত্রাসবাদের উপর ধিক্কার, ঘৃণা জানান।