সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, জনমত : যতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা রয়েছে, এর অন্যতম একটি পুলিশ। দিন কিংবা রাত, যে কোনো মুহূর্তে তাদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মুখোমুখি হতে হয়। আর এ কারণে অনেক সময় আহত হতে হয় পুলিশ সদস্যদের। একই সঙ্গে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে।
এসব কথা বিবেচনা করে নিজেদের ও দুর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ির ৬০ জন পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেন ডা. মিঠুন রায়, ডা. গৌতম বরন মিস্ত্রি, ডা. আহমেদ রিয়াজ চৌধুরী, ডা. মো. রিফায়েত হোসাইন, ডা. মৌসুমী ভদ্র।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ একটি হাওর অঞ্চলীয় জেলা। এখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্র রয়েছে। সেইসব পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সময়-অসময়ে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে পারেন না। আবার ছোটখাটো অসুস্থতার কারণে মাসে দুই তিনদিন শহরে এসে চিকিৎসা নিতে হয়। এতে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে গিয়ে মাস শেষে আর্থিক টানাপোড়ানে পড়তে হয় তাদের।
এছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়া, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত হতে হয়। আবার দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে গিয়ে অনেক রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে অনেক রোগী মারাও যায়।
এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যরাই যেন আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে পারে তার জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। হবিগঞ্জ শহরের ধুলিয়াখাল এলাকায় অবস্থিত পুলিশ লাইনসের হলরুমে দু’দিন ব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।
মঙ্গলবার ও বুধবার (২৩ ও ২৪ এপ্রিল) আয়োজিত এই কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের ৬০ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৩০ জন পুরুষ সদস্য ও ৩০ জন নারী সদস্য ছিলেন।
বুধবার বিকেলে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যদের হাতে সনদপত্র এবং ফাস্ট এইট বক্স তুলে দেন প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শেখ সেলিম।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন বলে দাবি করেন প্রশিক্ষণার্থীরা। এ বিষয়ে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী বলেন, এটা এক অন্যরকম অনুভূতি। কারণ পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অতিরিক্ত সেবা করতে পারব। একই সঙ্গে নিজেদের বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের প্রাথমিক চিকিৎসাও করতে পারব।
তারা আরও বলেন, পুলিশ সদস্য হিসেবে আমরা সামান্য বেতন পাই। যা দিয়ে পরিবার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। আমরা যারা দূর-দুরান্তের ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করি তাদের ছোটখাটো অসুখের জন্য শহরে আসতে হয়। ফলে ভাড়াবাবদই প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এতে করে মাস শেষে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়তে হয়। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ও ফাস্ট এইট বক্স পাওয়ার কারণে এখন ছোটখাটো অসুখের চিকিৎসা নিজেরাই করতে পারব।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিম বলেন, ‘পুলিশকে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। এতে করে নিজেরা অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই অবস্থায় যেন তারা নিজেদের চিকিৎসা অথবা সহকর্মীর চিকিৎসা করতে পারে তাই হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা আশা করি এই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পুলিশ সদস্যরা নিজেদের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আহত রোগীদের চিকিৎসা করতে পারবে।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, ‘দু’দিন ব্যাপী কর্মশালার মাধ্যমে ৬০ জন পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে ফাস্ট এইট বক্সের ভেতরে প্রেসার মাপার যন্ত্র, ডায়বেটিস মেশিন, সেভলন ক্রিম, ওজন মাপার যন্ত্রসহ চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে প্রতি মাসে কিছু ওষুধ দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম এ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতেও এ প্রশিক্ষণের ধারা অব্যহত রাখা হবে।’