জনমত নিউজ : যে বয়সে নারীদের জন্য সন্তান জন্ম দেওয়া অসম্ভব, সেই বয়সে এক নারীর মাত্র ১৩ মাসের ব্যবধানে ৮ সন্তান ‘জন্ম’ দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতে।
শিরোনাম দেখে হয়তো মনে হতে পারে এটি প্রকাশনার ভুল। আসলে তা নয়। ভারতের বিহার রাজ্যের কাগজে-কলমে এমন তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে।
সেখানে এমন ‘অঘটন’ আগেও ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদের জমানায় ঘটেছে। নীতীশ কুমারের জমানাতেও ঘটছে। বিহারের সরকারি এক নথি থেকে প্রকাশ্যে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
১৩ মাসে এক নারীর গর্ভে ৮ সন্তানের জন্ম, তাও আবার ৬৫ বছর বয়সে। এমন কথা শুনলেই বিস্মিত হতে হয় বইকি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কুমিল্লার শারমিন আক্তার নামে এক গৃহবধূ একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার ছাড়াই পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন ওই গৃহবধূ। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। যদিও, পাঁচ নবজাতকের মধ্যে তিনজনকে বাঁচানো যায়নি। ওজন কম হওয়ায় এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিন নবজাতক মারা যায়।
বিহারের যে আধিকারিক ওই রেকর্ড নথিভুক্ত করেছেন, তিনি হয়তো বাংলাদেশি বধূর উল্লেখ করে পালটা প্রশ্ন করতেই পারেন, কুমিল্লার শারমিন আক্তারের গর্ভে যদি পাঁচ সন্তান আসতে পারে, তা হলে বিহারের শান্তি দেবীর গর্ভে ৮ সন্তানে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা কিছু নেই। এ দুনিয়ায় সবই সম্ভব। শারমিন আক্তার শুধু নন। অতীতে এমন ঘটনা আরও ঘটেছে। প্রায়ই না হলেও কালেভদ্রে দেশ-বিদেশে এমন খবর শোনা গেছে। কিন্তু, খটকা যেখানে, প্রসূতির বয়স বর্তমানে ৬৫ এবং তিনি একসঙ্গে ওই ৮ শিশুর জন্ম দেননি। ১৩ মাসের মধ্যে কিছুদিনের ব্যবধানে একে একে আট সন্তান প্রসব করেছেন।
সরকারি রেকর্ড যা-ই বলুক, এটা যে বাস্তবিক সম্ভব নয়, তা আর বলার অপেক্ষাও রাখে না। আদতে তা ঘটেওনি। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর মতো বিহারে আরও এক কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। কেলেঙ্কারির নাম এনআরএইচএম। আরও ভেঙে বললে, ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন বা রাষ্ট্রীয় গ্রাম স্বাস্থ্য যোজনা। এই এনআরএইচএম’র আওতায় বরাদ্দ টাকা তুলতে বিহারের সরকারি রেকর্ড ৬৫ বছরের বৃদ্ধাকে ১৩ মাসের মধ্যে ৮ বার গর্ভবতী দেখানো হয়েছে। প্রতিটি ডেলিভারির পর সরকারি বরাদ্দ ১ হাজার ৪০০ টাকা রুপি করে তোলা হয়েছে।
ঘটনা হল, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে বিহারের মুজফ্ফরপুরের শান্তি দেবী আট সন্তান দূরে থাক, একটি সন্তানেরও জন্ম দেননি। অথচ, ১ হাজার ৪০০ রুপি করে ৮ বার সেই টাকা রাষ্ট্রীয় গ্রাম স্বাস্থ্য যোজনা থেকে বরাদ্দ হয়েছে। ফলে, এনআরএইচএম তহবিলের টাকা যে আত্মসাত্ করা হয়েছে, তা সামনে চলে আসে। কিন্তু, শান্তি দেবী নিজে সেই টাকার এক আনাও পাননি। তিনি ৮ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে কেউ বা কারা টাকা তুলেছেন, এর বিন্দুবিসর্গ তিনি অনেক দিন পর্যন্ত জানতে পারেননি।
তদন্তে জানা যায়, বিগত ২০ বছরের মধ্যে মুজফ্ফরপুরের ওই বৃদ্ধা কোনও সন্তানের জন্ম দেননি। শান্তি দেবীর ছোট ছেলের বয়স এখন ২০। মুজফ্ফরপুরের মুশারি ব্লকের ওই বৃদ্ধা জানেনও না ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের আগস্টের মধ্যে তাকে ১ হাজার ৪০০ রুপি করে ৮ বার দেওয়া হয়েছে। প্রতিবার তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার পরদিনই কেউ একজন সেই টাকা তুলে নিয়েছেন। বিষয়টি নজরে আসার পরই শান্তি দেবীর পরিবার ওই ব্যাংকে গিয়ে জানায়।
কিন্তু, শান্তি দেবীতেই শেষ নয়। বিহারে আরও অনেকজনের সঙ্গেই একই ঘটনা ঘটেছে। তেমনই আর একজন লীলা দেবী। বাড়ি ওই একই ব্লকের ছোটি কোঠিয়া গ্রামে। লীলা দেবীকেও দেখানো হয়, ১৩ মাসে তিনিও আট সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তার মধ্যে সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, একদিনে দু’বার সন্তান প্রসবও তিনি করেছেন। হকিকত হল, বিগত এক দশকের মধ্যে তার কোনও সন্তান হয়নি। অনেক আগেই তিনি পরিবার পরিকল্পনায় অস্ত্রোপচার করিয়ে নিয়েছেন। লীলা দেবীর ক্ষেত্রেও টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার পরদিনই গায়েব হয়ে গেছে।
পাবলিক হেলথ সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার উপেন্দ্র চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত করণিক ছুটিতে আছেন। তাই তার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে, সিভিল সার্জন ডাক্তার এসপি সিং প্রতিশ্রুতি দেন, প্রকল্পের টাকা যারা আত্মসাত্ করেছেন, তাদের খুঁজে বের করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ জন্য তারা তদন্ত করবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।
বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে বৃহস্পতিবার জানান, এনআরএইচএম কেলেঙ্কারিতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি তদন্ত করবে। দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র: দ্য নিউজ ট্র্যাস