চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : চুনারুঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক মাদকের বিরোদ্ধে জেহাদ ঘোষনার পরও থামছে না মাদক ব্যবসা। নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে মাদক। চুুনারুঘাটের আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল খাস ও গাজীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট, গোবরখলা ও সাদ্দাম বাজার এলাকার ১০ জন প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী দেদারছে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে রোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সীমান্তবর্ত্তী গ্রাম চিমটিবিলখাস, গোবরখলা, টেকেরঘাট ও মোকামঘাট এলাকা ঘুরে মাদক ব্যবসার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।
সীমান্ত সুত্র জানায়, গাজীপুর ইউপি’র টেকেরঘাট গ্রামের পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষপাড়া ও কুলিবাড়ি গ্রাম। মোকামঘাটের ওপারে খোয়াইচর। তারপর ত্রিপুরার দূর্গানগর গ্রাম। মুলত ত্রিপুরার দুর্গানগর, কুলিবাড়ি, ঘোষপাড়া, প্রহড়মুড়া, টেংড়াবাড়ি, বগাবিল দিয়েই যত চোরাচালন সংঘটিত হয়।
ভারত সরকার ২০০৫ সালে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করে কিন্তু চোরাচালান, অবৈধ লোকজনের যাতায়াত কখনো বন্ধ করতে পারেনি। চোরাকারবারীরা কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে, পাহাড়ী ছড়া দিয়ে চোরাচালান করে যাচ্ছে। তবে ভারতের নাগরিকরা কখনো কাঁটাতার অতিক্রম করে না।
বাংলাদেশী শ্রমিকরা বেশী টাকা রোজগারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে অবৈধ মালামাল আনতে ভারতে চলে যায়। এ ধরনের ঝুঁকি নিতে গিয়ে বিগত সময়ে বহু মানুষ বিএসএফ’র গুলিতে প্রান হারিছে। এ কারণে বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীকে নানা অপমান সইতে হয়েছে।
সীমান্ত সুত্র আরো জানায়, অতি সম্প্রতি কুখ্যাত চোরাকারবারীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করে আইন শৃংখলা বাহিনী বেশ কিছু মাদকের চালান আটকাতে সক্ষম হয়। আহম্মদাবাদ ইউপি’র চিমটিবিল গ্রামের এক সময়ের কুখ্যাত গরু চোর মামদ আলী ও তার পুত্র সিপন মিয়া বিজিবি’র সোর্স পরিচয়ে মাদক ও ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিপন মিয়া বিজিবি’র পোষাকের আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ও গরুর ব্যবসা। তার ছেলে সিপন এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত। শুধু তাই নয়,সে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পুলিশ ও বিজিবি’র নামে মোটা অংকের বখরা নিয়ে মাদকের চালান পৌছে দিচ্ছে নির্দিষ্ট আড়তে। সে বিজিবি’র পোষাক পরিহিত অবস্থায় থাকার কারনে কেউ তার বিরোদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করেন না। প্রতিবাদ করলে বিজিবি দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকী দেয়।
গাজীপুর ইউপি’র সাদ্দাম বাজার এলাকার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরও থামছে না মাদক ব্যবসা। এরা চিমটিবিলের সিপনকে সাপ্তাহিক বখরা দিয়ে মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে সিপন। আহম্মদাবাদ ইউপি’র কয়েকজন প্রভাবশালী কথিত রাজনৈতিক কর্মী ও ভুঁয়া সংবাদকর্মীর ছত্রছায়ায় থেকে সিপন ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছে।
এদিকে টেকেরঘাট গ্রামের কুখ্যাত শহীদ নিজেকে যুবনেতা পরিচয় দিয়ে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার জলিলও মাদক ব্যবসার বড় পাচারকারী। জলিল নিজেকে বিজিবি’র সোর্স পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বখরা উত্তোলন করে। গোবর খলা গ্রামের শাহীন দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকে ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও সে সব সময় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সে নিজেকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে নিজের ব্যবসাকে হালাল করছে।
সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে,চিমটিবিল সীমান্তের ১৯৭১ নং পিলারের কাছে ‘বেলজিয়াম’,১৯৭৩ নং পিলারের কাছে ‘শ্বশান’, ১৯৭৪ নং পিলারের কাছে ‘সুতাং ছড়া’, ১৯৭২ নং পিলারের কাছে ‘পাঁচচোঙ্গা টিলা’, ১৯৭৩ নং পিলারের মাঝামাঝি ‘বেলজিয়াম ভাঙ্গা’ এবং ১৯৭৫ নং সীমান্ত পিলারের সন্নিকটে মাকড়া ছড়া’নামক স্থান দিয়ে প্রতিদিন আসছে গাঁজা,চা পাতা ও ভারতীয় গরু। প্রতি গরুর জন্য সিপনকে ১ হাজার টাকা দিতে হয় গরু ব্যবসায়ীদের।
এরপর ওই গরু স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে হালাল হয়ে চলে আসে স্থানীয় বাজারগুলোতে। কোন সময় চা বাগান ঘেরা নির্জন স্থানগুলোতে ট্রাক বোঝাই হয়ে চলে যায় নির্দিষ্ট স্থানে।
গাজীপুর ইউপি’র দুধপাতিল, বড়ক্ষের, টিলাবাড়ি, টেকেরেঘাট, পাক্কাবাড়ি, মোকামঘাট, আহম্মদাবাদ ইউপি’র চিমটিবিল, ছয়শ্রী, কালিশিরি, আমু চা বাগান, নালুয়া চা-বাগানের দুই শতাধিক মানুষ মাদক ব্যবসায় জড়িত। অনেক দাগী চোরনাকারবারীর নাম প্রশাসনের কাছে রয়েছে।
সিপন মিয়া কিভাবে বিজিবি’র পোশাকে ঘুরা ফেরা করছে এ প্রশ্নের জবাবে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সামিউন্নবী চৌধুরী বলেন, বিজিবি’র পোষাক পরিধান করা সাধারনের জন্য সম্পূর্ন বেআইনী। তবে সিপন কিভাবে বিজিবি’র পোষাকে ঘুরাফেরা করছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক বলেন,সীমান্তে মাদক চোরাচালান রোধে পুলিশ চেষ্টা করছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমান মাদকসহ ৩০/৩৫ জন ব্যবসায়ীকে আটক করেছে।
তিনি বলেন, জেল ফেরত এসে অনেকেই আবার পুর্বেও ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে। সাধারন সচেতন মানুষ মনে করেন, ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চুনারুঘাটকে মাদকমুক্ত করতে হলে দাগী চোরাকারবারী, তাদের গডফাদারদের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। সীমান্তের গোপন পথে বিজিবি’র সার্বক্ষনিক টহল থাকতে হবে,জেল ফেরত মাদক ব্যবসায়ীর দিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে। সীমান্ত এলাকার ইউপি সদস্যদের প্রশাসনিক নজরে আনতে হবে।