মোঃ জামাল হোসেন লিটন : দিন দিন হুমকির দিকে যাচ্ছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর বিচরণ। গাছ চুরি, বনের গভীরে স্থানীয়দের যাতায়াত ও দ্রুতগতির যান চলাচল এখন বন্যপ্রাণী বিচরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বনাঞ্চলের রাস্তায় গতি সীমা থাকলেও তা মানছেন না চালকরা। এছাড়া প্রতিদিন দিন-রাত বিকট শব্দে আস-যাওয়া করছে শত শত বালু বোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টর। এগুলোর নিচে চাপা পড়ে প্রায়ই প্রাণ হারাতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রাণীকে। এ ব্যাপারে মানুষের মানবিক হওয়ার বিকল্প নেই বলে জানালো বন বিভাগ।
২০০৫ সালে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এখানে রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু।
এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ ও ছয় প্রজাতির উভচর। আরও রয়েছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পশু-পাখি।
গত এক বছরে বানর, সজারু, হনুমান, চশমা পড়া হনুমান ও সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় অর্ধশত প্রাণী গাড়ি চাপায় মারা গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নির্দিষ্ট হিসেব না থাকলেও দুর্ঘটনায় প্রাণী মারা যাওয়ার কথা শিকার করেছে বন বিভাগ। যদিও তাদের দাবি সম্প্রতি কমেছে বন্যপ্রাণীর মৃতের সংখ্যা।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জার আব্দুল মোতালেব জানান, উদ্যানের ভেতর দিয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক। গতিসীমা নির্ধারিত থাকলেও অনেক সময় চালকরা তা মানছেন না। যে কারণে প্রায়ই মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। দুর্ঘটনা এড়াতে বন্যপ্রাণীদের প্রতি মানবিক হওয়ার বিকল্প নেই।
তিনি জানান, গত এক বছর পর্যন্ত প্রায়ই গাড়ি চাপায় বন্যপ্রাণী মারা যেতো। তবে বর্তমানে কিছুটা কমেছে। কিছুদিন আগে গাড়ি চাপায় একটি সজারু ও একটি সাপ মারা গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে সজারুর দেহের কিছু অংশ রাস্তায় পাওয়া যায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পর্যটকরা চলে যান গভীর অরণ্যে। গাছ কাটার জন্য স্থানীয় কিছু লোকও সারাক্ষণ ভেতরে ঘুরতে থাকেন। যে কারণে অনেক প্রাণী ভয় পায়। শিকারিদের ভয়ে বন্যপ্রাণীরা ছুটাছুটি করে। পরে লোকালয়ে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতছড়ি উদ্যানের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন কয়েকশ’ বালু বোঝাই ট্রাক-ট্রাক্টর চলাচল করে বনের ভেতরে রাস্তা দিয়ে। যে কারণে ভয়ে থাকে বন্যপ্রাণীরা। এছাড়া রাতে রাস্তা পাড় হতে ট্রাক-ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে তারা। সম্প্রতি প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের প্রাণীকে লোকালয়ে আসতে দেখা যায়। পরে এরা বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়। অনেক প্রাণীকে পিটিয়ে মেরেও ফেলেন মানুষজন।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, গত দুই বছরে বানর, হনুমান, বন মোরগ, চশমা পড়া হনুমান, বনরুই ও সাপসহ অর্ধশতাধিক প্রাণী গাড়ি চাপায় মারা গেছে। আহত হয়েছে অসংখ্য প্রাণী। রাস্তায় গতি সীমা অনুসরণে করেন না চালকরা। এছাড়াও বিভিন্ন অমানবিক আচরণে প্রাণীরা বিপন্ন হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, গত বছর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছয়টি বানর মারা যায়। এখন সুরক্ষিত বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন হচ্ছে। এতে কমে যাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা। রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে প্রাণীদের জন্য রাস্তার এপার-ওপার নেট দিয়ে একটি বিকল্প রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। এতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। এ রকম ১০ থেকে ১৫টি রাস্তা করে দিলে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর হাত থেকে প্রাণীরা রক্ষা পাবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান- প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কয়েকদিন আগেও একটি হরিণ শিকারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরও যে কোনো উদ্যোগের প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসন তা নেবে।