ফয়সল আহমেদ তারেক : চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউপি’র চাঁনভাঙ্গা বাজারস্থ খোয়াই নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি কুচক্রী মহল। কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দিন-রাত অবাধে নদী থেকে ইচ্ছে মতো বালু উত্তোলন করছে এই মহল। বালু পাচারকারী এই মহলের কাছে প্রশাসন যেন অসহায়। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন ও অবৈধ দখলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে খোয়াই নদীর বাঁধ। বালু পরিবহনের জন্য ইচ্ছেমতো নদীর বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করেছেন ইজারাদাররা। এছাড়া নদীর ভেতর অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন অনেকেই। অবৈধ দখল ও বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনের ফলে খোয়াই নদীর বাঁধগুলো অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চাঁনভাঙ্গা বাজারস্ত খোয়াই নদীর কয়েকটি অংশে ভুয়া লিজ দেখিয়ে নতুন বালু উত্তোলন করার কারণে সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন অলিপুরের বিভিন্ন কোম্পানীতে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০ থেকে ৩০টি ট্রাক্টর এবং ৮০ থেকে ১০০টি ড্রাম ট্রাক বালু বহন করে, ফলে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। এলাকার পথচারী ও শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় মধ্যে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সড়ক ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে জন্য সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা জনগণের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু এই আশীর্বাদকেই মানুষের দুর্ভোগে পরিণত করে ট্রাক ও ট্রাক্টর। ট্রাক্টর নামের অবৈধ যানের প্রকৃত নাম হচ্ছে ‘পাওয়ার টিলার।’ প্রযুক্তির ব্যবহারে এটি জমি চাষাবাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। অথচ এটির ইঞ্জিনের পেছনে বড় ট্রলি লাগিয়ে এটিকে সড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই যানবাহনটি সড়কে চলাচলের কোনো অনুমোদন নেই। অথচ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই অবৈধ যানটি সড়কে চলাচল করছে। দেখা গেছে যে, রাস্তার পাশে থাকা দোকানের ভেতর ঢুকে পড়েছে, পথচারীকে চাকার নিচে পিষ্ট করে দিয়েছে এবং অন্য যানবাহনের সাথে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিয়েছে এই ট্রাক্টর। চাঁদভাঙ্গা বাজার থেকে চাঁদভাঙ্গা তেমুনিয়া পর্যন্ত ২ কি.মি এই ছোট রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া ভাবে বালু বহনকারী গাড়ি নিয়মিত আসা যাওয়া করে। যার ফলে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনায় কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছে অথবা চিরদিনের মত পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ দূর্ঘটনা ঘটে অদক্ষ, অযোগ্য ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ড্রাইভারের কারণে। প্রতিনিয়ত সংঘটিত সড়ক দূর্ঘটনা এলাকার মানুষকে শঙ্কিত করে তুলছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলের ফলে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের আশীর্বাদের পরিবর্তে অসাধারণ দুর্ভোগ এবং কোনো কোনো জায়গায় মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়। চাঁদভাঙ্গা বাজারস্ত খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন কালীন সময় থেকে এ পর্যন্ত এই রাস্তায় বালু বহনকারী গাড়ি দ্বারা এলাকার ৭ থেকে ৮ জন লোক চিরতরে প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় তাদের পরিবারে জমে উঠেছিল স্বজন হারানোর করুণ বেদনা ও বুকফাটা আর্তনাদ। ভেঙ্গে গিয়েছিল তাদের সাজানো সংসার। এতো জনের প্রাণ হারানোর পরেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন, নেয়া হয়নি কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা। প্রশাসনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা যে কোনো মূল্যে চাঁদভাঙ্গা বাজারস্ত খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন, নদীর বাঁধ কাটা, স্থানীয় সড়কে ট্রাক্টর ও ট্রাক চলাচল বন্ধ করা হোক।