রায়হান আহমেদ : ফরিদ মিয়া পেশায় রিক্সা চালক। বয়স ৪৩বছর। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পীরেরগাঁও গ্রামে নড়বড়ে একটি কুঁড়েঘরে তার বসবাস। তিনি ওই গ্রামের মোঃ এরসাদ উল্লার পুত্র। নয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তিনি। সামান্য বৃষ্টি হলেই তার ঘরের ভেতরে পানি খেলা করে। পানি সেঁচে পার হয় নির্ঘুম রাত। যেখানে পরিবারের তিনবেলা খাবার জুটেনা। সেখানে ঘর মেরামত করা ফরিদ মিয়ার জন্য কল্পনা মাত্র।
ফরিদ মিয়ার অভাবের দিন যেন কাটতেই চায় না। তারপরও তিনি মনেপ্রাণে চায়, তার চার ছেলে-মেয়ে যেন শিক্ষিতমহলে স্থান পায়। ফরিদ মিয়ার ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। খাবার কম খেলেও তার আক্ষেপ নেই। অন্তত ছেলে-মেয়েরাতো শিক্ষিত হবে। তার মতো তো আর রিক্সা চালাতে হবে না। অভাবের সংসার কোনো রকম চলে যাচ্ছিল। কিন্তু তার জীবনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালো অশুভ ও অক্ষমতার মতো নির্মম বাস্তবতা। যেন মরার উপর খরার ঘা। দূর্ঘটনায় তার বাম পা ভেঙ্গে যায়। অচল হয়ে পড়েন তিনি। অর্থের অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে না পেরে বিভিন্ন কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কিন্তু এতে ভালো ফল আসেনি।
অনেকদিন ধরে তিনি কর্মহীন। ভাঙ্গা পা নিয়ে বিছানায়। উপায়ন্তু না পেয়ে সে ধারদেনা করে পায়ে প্লাস্টার করিয়েছেন। কিভাবে সংসার চলবে! অন্যদিকে পায়ের চিকিৎসা করাবেন কি দিয়ে! আবার এ বর্ষাকালে ভাঙ্গা ঘরে থাকবেনই কিভাবে! সব মিলিয়ে যেন তিনি দিশেহারা।
ফরিদ মিয়ার বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গা ঘরের ভেতর এককোণে অসহায়ের মতো শুয়ে আছেন। সিমেন্টের খালি বস্তা দিয়ে ঘরের উপরের ভাঙ্গা টিন ঢাকা। অভাবের কারণে নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা। বর্তমান পরিস্থিতি অর্থাৎ এই করোনার মাঝে পেয়েছেন তিনি যৎসামান্য সহায়তা। যা দিয়ে ৯জনের পরিবার চালানো আকাশ কুসুম।
শয্যাশায়ী রিক্সা চালক ফরিদ মিয়া জানান, “আমি অনেকদিন ধরে অসুস্থ। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না। কাঙ্কিত কোনো সহায়তাও পাচ্ছি না। এ ভাইরাসের কারণে সকলের অবস্থাই খারাপ, তাই আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পেতেও সুবিধা হচ্ছে না। আমি জানিনা, সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে!!”
তিনি আরো বলেন, “ডাক্তার বলেছে অপারেশন করাতে হবে। অপারেশন করতে লাগে অনেক টাকা। এতো টাকা আমি কোথায় পাব। ছেলে-মেয়েদের মুখেই বা কি তুলে দিব!!”
তবে যদি সরকারি সহায়তা ও সমাজের বিত্তবানরা ফরিদ মিয়ার পাশে এসে দাঁড়ান, তাহলে হয়তো তার অবস্থার উন্নতি ঘটবে।