হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : পাঁচ দিন লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন হবিগঞ্জ শহরের ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ টিউমার অপারেশ করতে গিয়ে জরায়ু কেটে দেয়া খদর চাঁন বিবি (৬৫)।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিলেটের ‘মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে’র আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত খদর চাঁন বিবির ভাগ্নে মহিবুল ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন- ‘শঙ্কটাপন্ন রোগী তিনদিন সিলেট হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও একদিনও খবর নেননি জরায়ু কেটে দেয়া চিকিৎসক ডা. আরশেদ আলী। রোগী মারা যাওয়ার পর আমরা ডা. আরশেদ আলীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি এক রকম গাঁ ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।’ তবে সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানে নিহত খদর চাঁন বিবির পরিবারের সাথে আলোচনায় বসতে চায় বলেও জানান তিনি।
শাহিন বলেন- ‘আমরা চাই ডা. আরশেদ আলী ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. আরশেদ আলীসহ দুষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে যানাজা শেষে নিহত খদর চাঁন বিবির লাশ তার গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার মকরমপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে ডা. আরশেদ আলী বলেন- ‘ভুল হতেই পারে, তবে দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে অনেক অপারেশন করেছি এমনক কোন ঘটনা ঘটেনি। এই রোগীর কিডনিতে আরও আগের থেকেই সমস্যা ছিল যার কারণে এমনটা হয়েছে।’
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন- ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল ও আমার পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক একজন ব্যক্তি রোগীর খোঁজ নিচ্ছেন। এক ঘন্টা পরপরই রোগীর স্বজনদের মোবাইল কলের মাধ্যমে সর্বশেষ অবস্থার খবর নেয়া হচ্ছে। এছাড়া সিলেট চিকিৎসা করাতে যা খরচ হচ্ছে সবটাই আমাদের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে।’ বিষয়টি সমাধানের জন্য নিহত নারীর পরিবারের সাথে আলোচনায় বসে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য- বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর গ্রামের মৃত নোয়াজিশ মিয়ার স্ত্রী খদর চাঁন (৬৫) জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হন। গত ১ সপ্তাহ আগে তিনি হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। গত রবিবার সকালে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আরশেদ আলী তাকে অপারেশনের জন্য শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ অপারেশনের পরামর্শ দেন। আরশেদ আলীর পরামর্শে ওই নারীকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। বিকেলে ডা. আরশেদ আলী সেন্ট্রাল হসপিটালে ওই নারীর জরায়ু টিউমারের অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশন শেষে ওই নারীকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হলেও জরায়ুতে লাগানো ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব আসা বন্ধ থাকে। রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও এক ফোঁটা প্রস্রাবও বের হয়নি। এমনকি ওই নারীর পেট ফোলে উঠে। এক পর্যায় রাত ১টার দিকে পুণরায় ডা. আরশেদ আলীকে খবর দিলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে আবারও ওই নারীর অপারেশন করেন। কিন্তু এরপরও রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভোরে তাকে সিলেট রেফার্ড করে দেয়।
এদিকে, মূমুর্ষ অবস্থায় ওই নারীকে সিলেট রেফার্ড করলে ছাড়পত্রে সীল দেয়নি সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সিলেটের কোন হাসপাতাল ওই রোগীকে ভর্তি নেয়নি। এতে রোগীর অবস্থা আরও শঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠে।
সারাদিন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করতে না পারায় সোমবার রাত ৯টার দিকে আবারও রোগী নিয়ে হবিগঞ্জ ফিরে আসেন স্বজনরা।
পরে তারা সেন্ট্রাল হসপিটালে এসে বিক্ষোভ করলে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এক পর্যায়ে ছাড়পত্রে সীল নিয়ে আবারও তারা রোগীকে নিয়ে সিলেট চলে যান।
রাতে সিলেটের মাউট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।