জনমত রিপোর্ট : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুটি পদ ঘোষণার পর প্রায় ৯ মাস পার হলেও এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব। এছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে সম্প্রতি কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, যা সমালোচনায় ফেলেছে বর্তমান নেতৃত্বকে। সব মিলিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ডে মোটেও খুশি নয় আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড।
জানা গেছে, সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগের নয়জন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে বৈঠকে বসেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে দ্রুত কমিটি গঠনের তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আয়োজিত চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখী কনসার্ট ভণ্ডুলের ঘটনায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। তবে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে চলছে দরকষাকষি। উভয় পক্ষই তাদের অনুসারীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিভিন্ন পদে বাসতে চাচ্ছেন। এছাড়া কমিটিতে জায়গা দেয়ার জন্য বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সুপারিশ করেছেন। ফলে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কয়েক দফা বৈঠকের পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব।
কমিটির বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা সকল প্রকার বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দিতে চাই। যদিও পদ প্রত্যাশীদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ে আমাদের একটু সময় বেশি নিয়ে ফেলেছি, তার পরও আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দিতে পারবো। কমিটি নিয়ে যাতে কেউ কোন ধরণের প্রশ্ন তুলতে পারেন সে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সম্প্রতি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আয়োজিত চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখী কনসার্ট ভন্ডুলের ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি দাবি করে তিনি বলেন, সেদিন কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমি এবং সভাপতি মিলে সেটি নিরসন করেছি। ছাত্রলীগের মধ্যে কোন গ্রুপিং বা কোন্দল নেই।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ ৪ নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বি এম মোজাম্মেল হক। বৈঠক সূত্র জানায়, ১২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত ঘটনার কারণ ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে জানতে চান আওয়ামী লীগের নেতারা। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা না ঘটাতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে দেরি হওয়ায় সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছে তার কারণ জানতে চেয়েছেন সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে এত দেরি হওয়ার জন্য তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত দেয়ার জন্য সংগঠনের গত কমিটির ২ নেতার কাছ থেকে পরামর্শ নিতেও ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা সে লক্ষে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনের পর কমিটি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও শীর্ষ পদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে সময় নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছর ৩১ জুলাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন না হলে কমিটির কার্যকারিতা থাকবে না। বিশেষ বা জরুরি পরিস্থিতিতে বর্ধিত সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কমিটি তিন মাসের জন্য সময় বাড়াতে পারে। এছাড়া গঠনতন্ত্রে জেলা ইউনিটগুলোর মেয়াদ রাখা হয়েছে এক বছর।